| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ভারতের ৪ শহর ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্কবার্তা কানাডার


ভারতের ৪ শহর ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্কবার্তা কানাডার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     20 October, 2023     05:38 PM    


হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড ঘিরে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়া কানাডা নয়াদিল্লি থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহারের পর এবার তার নিজ দেশের নাগরিকদের ভারত ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কবার্তা দিয়েছে। ভারতে কানাডার প্রধান দূতাবাস নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। এছাড়া মুম্বাই, চন্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে কানাডার কনস্যুলেট কার্যালয় রয়েছে। শুক্রবার দিনের শুরুতেই নয়াদিল্লির দূতাবাস থেকে ৪১ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে কানাডা। তারপরেই এলো এই সতর্কবার্তা।

শুক্রবারের ওই সতর্কবার্তায় কানাডার সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই, চন্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে ভ্রমণের সময় নাগরিকরা যেন অবশ্যই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকেন এবং কোথাও কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করেন। 

সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘কানাডা ও ভারতের সাম্প্রতিক যে কূটনৈতিক সম্পর্ক, তা আমলে নিয়ে ভারতের গতানুগতিক সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কানাডার নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে কানাডাবিরোধী মিছিল ও বিক্ষোভ হওয়ার তথ্যও আমরা পেয়েছি। এই পরিস্থিতে কানাডার সরকারের আশঙ্কা, ভারতে বিশেষ করে রাজধানীসহ এই চারটি শহরে গেলে কানাডার নাগরিকরা হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের শিকার হতে পারেন। এই কারণে ভারতে ভ্রমণরত বা ভ্রমণে যেতে ইচ্ছুক কানাডীয়দের প্রতি সরকারের আহ্বান- ভ্রমণের সময় অবশ্যই সতর্কতা মেনে চলবেন এবং বিশেষ করে রাজধানী নয়াদিল্লি ও তার আশপাশের শহর, মুম্বাই, চন্ডীগড় এবং বেঙ্গালুরুতে ভ্রমনের সময় উচ্চ সতর্কতা মেনে চলবেন। এসব শহরে ভ্রমণের সময় অপরিচিত স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা যতখানি সম্ভব কম বলবেন এবং নিজের যে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধান থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ভারতের পরই যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ বসবাস করেন, তার নাম কানাডা। দেশটির ২০২১ সালের জনশুমারির তথ্য বলছে, প্রায় ৮ লাখ শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন কানডায়। হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন কানাডার বসবাসকারী শিখদের একজন নেতা । ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন তিনি। এদিকে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ‘ফেরার’ সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং ‘শিখস ফর জাস্টিস’ কানাডা শাখার নেতা ছিলেন তিনি। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ১৮ সেপ্টেম্বর  সোমবার কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন। স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, এই ঘটনা (হরদীপ হত্যা) সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।

ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেয় কানাডীয় সরকার। এদিকে ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর থেকে নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত।ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে, সেই সঙ্গে ট্রুডোর বক্তব্য এবং ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধও হয়েছে দেশটি। ‘র’ কানাডীয় শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার পরের দিনই পাল্টা ব্যবস্থা ভারতের কানাডার দূতাবাসের একজন জেষ্ঠ্য কূটনীতিকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি।